বাংলা কবিতা গল্প উপন্যাস ভান্ডার

বড়দের বাংলা কবিতা,ছোটদের বাংলা কবিতা,বড়দের বাংলা গল্প,ছোটদের বাংলা গল্প এবং বাংলা উপন্যাস এর প্লাটফর্ম।বাংলা সাহিত্যের সকল বিখ্যাত কবি,লেখকদের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব লেখা কবিতা এবং গল্প এই ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন।

Breaking

শনিবার, ৩০ মে, ২০২০

মে ৩০, ২০২০

দেশপ্রেম-নিজস্ব কবিতা

দেশপ্রেম

সাহেমিরাজ মল্লিক



ভারত আমার সোনার দেশ 
এমন দেশ কোথাই খুঁজে পাবে নাকো
বিশ্বসেরা ভারত আমার 
এখানেই জন্ম ,এখানেই মৃত্যু আমার।
আজকে আমি দেশদ্রোহী
পঞ্চবার দিনে এ ভুমি চুম্বনের ও'পরে।
এ মাটি করি পুজো আমি
তা ও আমাকে শুনতে হয় দেশদ্রোহী তুমি..
ধর্মের আধারে নয়গো এ ভারত আমার
এ যে সব ধর্মের ও'পরে।
ধর্ম তোমাকে নাইকো শেখায়
অন্য ধর্ম করতে ঘৃণা 
করছে তোমার ব্রেনওয়াশ
অন্ধ ভক্তরা ধর্মের নামে।
উপায় নেই ওদের কাছে
ধর্মের নাম বাদ দিলে
পড়বে ফাঁস ওদের গলায়
দেশবাসীর ও সামনে।
এ বার তুমি খুলে চোখটা 
দেখো বিপদ এ আছে ভারতমাতা
করবো না আর ধর্মের লড়াই
এ বার আমাদের অধিকার চায়,
চলবে লড়াই এ বার
খাদ্য বাসস্থানের ও'পরে।



মে ৩০, ২০২০

পুরুষ মানুষ -নিজস্ব কবিতা


পুরুষ মানুষ




সবাই বলে পুরুষ তুই

চোখে জল মানায় না কী?

সমাজ বলে মরদ তুই

তোদের আবার কষ্টটা কী!!




বলি কাকিমা মানুষ আমরা

মাটির পুতুল নয়

পরে গেলে ব্যাথা হয়

লোহার শরীর নয়।




অল্প বয়সেই চিন্তা আসে

বাবার আয়ের প্রতি

বড় বয়সে চিন্তার কারণ 

সন্তান সন্ততি।




তোমরা ভাবো শক্ত যদিও

মনটা খুবই নরম

কষ্ট আমাদের ও হয়

শুধু করিনা প্রদর্শন।




দিনশেষে ঘর্মাক্ত শরীর

কষ্ট নিয়ে বুকে

আমরাও খুঁজি একটি কাঁধ

কাঁদবো মাথা রেখে।






বুধবার, ১৩ মে, ২০২০

মে ১৩, ২০২০

অনন্ত প্রেম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ভূমিকা 

বাঙালী কবিতা প্রেমিকদের আবেগ হল রবীন্দ্রনাথ, একধারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনন্ত প্রেমের কবিতা ছাড়াও লিখেছেন বিভিন্ন ধরণের কবিতা।
 অনন্ত প্রেম কবিতাটি রবি ঠাকুর নিজের যৌবন থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত নিজের ভালোলাগা বা ভালোবাসার  প্রতিটি মুহুর্তকে তুলে ধরেছেন। তিনি খুব সম্ভত প্রথম যেই বালিকার প্রেমে পরেছিলেন তার কথা ও প্রেমের আত্মনিবেদন প্রকাশ পায় এই কবিতাতে।

অনন্ত প্রেম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার–
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।


যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।


আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে, মিলনমধুর লাজে–
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।


আজি সেই চির-দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে,
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি–
সকল কালের সকল কবির গীতি।



অনন্ত প্রেম কবিতার ভাব সারমর্ম

এই কবিতাটি মানসী নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।কবিতাটির সারমর্ম যাবার আগে একটু জেনে নিই কবিতাটি কোন পটভূমিতে লেখা হয়েছিল।

বাল্যকাল থেকে পশ্চিম ভারত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে রোমান্টিক কল্পনার বিষয় ছিল।এখানে তিনি বিদেশের সাথে এদেশের সংযোগস্থল বলে মনে করতেন।মানসী তে উল্লেখিত কথা অনুযায়ী বহু শতাব্দী ধরে এখানেই ইতিহাসের বিপুল পটভূমিকাই বহু সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন এবং নব নব ঐশ্বর্যের বিকাশ ঘটে।প্রকৃতির বিচিত্র রূপ আর বর্ণের ছবির ধারা অঙ্কিত করে চলেছে বলে তার ধারণা। এই সময় তিনি পাড়ি দেন গাজীপুরে।গাজীপুরে বেছে নিয়েছিলেন কেন তাও উল্লেখ পাওয়া যায় মানসী তে।

সারমর্ম

এই কবিতায় কবি তার প্রেম আবেগকে এক অনন্য রূপ দিয়েছেন।তখন তিনি বলতে চেয়েছেন প্রকৃতির অন্যান্য রূপের কথা যুগ যুগ ধরে তার রূপ যেন প্রেমে মুগ্ধ করেছে।প্রতিবার কতইনা উপহার নিয়ে এসেছে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন মায়াতে। অন্যদিকে প্রাচীন কালে ঘটে যাওয়া দুঃখের ইতিহাস ও সমান গুরুত্বপূর্ণ কবির কাছে। হয়তো সেই  ইতিহাস নতুন কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি করে তার ব্যথার দুঃখের কাহিনীগুলি উজার করে দেবে।উত্তর আকাশে জ্বলতে থাকা ধরুবতারা তার এ বার্তা বহন করে চলেছে।কিন্তু এরই মাঝে কবি প্রেমকে এক অনন্ত রূপ দিয়েছেন যার কোন শেষ নেই। ইতিহাস বদলায় সময় বদলায় কিন্তু প্রেম কখনো শেষ হয় না অনন্তকাল ধরে তা স্থায়ী হয়তো তা প্রকাশ পায় বিভিন্ন রূপে।এই প্রেমের টানে কত মানুষ কবি হতে চেয়েছেন।প্রেমের মধুর বাণী খোদাই করেছেন তার হৃদয়ের খাতায়।




মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

মে ১২, ২০২০

নাসিক হইতে খুড়ার পত্র(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা)

নাসিক হইতে খুড়ার পত্র

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 



কলকত্তামে চলা গয়ো রে সুরেনবাবু মেরা,
সুরেনবাবু, আসল বাবু, সকল বাবুকো সেরা।
খুড়া সাবকো কায়কো নহি পতিয়া ভেজো বাচ্ছা--
মহিনা-ভর্‌ কুছ খবর মিলে না ইয়ে তো নহি আচ্ছা!
টপাল্‌, টপাল্‌, কঁহা টপাল্‌রে, কপাল হমারা মন্দ,
সকাল বেলাতে নাহি মিলতা টপাল্‌কো নাম গন্ধ!
ঘরকো যাকে কায়কো বাবা, তুম্‌সে হম্‌সে ফর্‌খৎ।
দো-চার কলম লীখ্‌ দেওঙ্গে ইস্‌মে ক্যা হয় হর্‌কৎ!
প্রবাসকো এক সীমা পর হম্‌ বৈঠ্‌কে আছি একলা--
সুরিবাবাকো বাস্তে আঁখ্‌সে বহুৎ পানি নেক্‌লা।
সর্বদা মন কেমন কর্‌তা, কেঁদে উঠ্‌তা হির্দয়--
ভাত খাতা, ইস্কুল যাতা, সুরেনবাবু নির্দয়!
মন্‌কা দুঃখে হূহু কর্‌কে নিক্‌লে হিন্দুস্থানী--
অসম্পূর্ণ ঠেক্‌তা কানে বাঙ্গলাকো জবানী।
মেরা উপর জুলুম কর্‌তা তেরি বহিন বাই,
কী করেঙ্গা কোথায় যাঙ্গা ভেবে নাহি পাই!
বহুৎ জোরসে গাল টিপ্‌তা দোনো আঙ্গ্‌লি দেকে,
বিলাতী এক পৈনি বাজ্‌না বাজাতা থেকে থেকে,
কভী কভী নিকট আকে ঠোঁটমে চিম্‌টি কাটতা,
কাঁচিলে কর কোঁক্‌ড়া কোঁক্‌ড়া চুলগুলো সব ছাঁটতা,
জজসাহেব কুছ বোল্‌তা নহি রক্ষা করবে কেটা,
কঁহা গয়োরে কঁহা গয়োরে জজসাহেবকি বেটা!
গাড়ি চড়্‌কে লাঠিন পড়কে তুম্‌ তো যাতা ইস্কিল্‌
ঠোঁটে নাকে চিম্‌টি খাকে হমারা বহুৎ মুস্কিল!
এদিকে আবার party হোতা খেল্‌নেকোবি যাতা,
জিম্‌খানামে হিম্‌ঝিম্‌ এবং থোড়া বিস্কুট খাতা।
তুম ছাড়া কোই সম্‌জে না তো হম্‌রা দুরাবস্থা,
বহির তেরি বহুৎ merry খিল্‌খিল্‌ কর্কে হাস্তা!
চিঠি লিখিও মাকে দিও বহুৎ বহুৎ সেলাম,
আজকের মতো তবে বাবা বিদায় হোকে গেলাম।


সুরেনবাবু = সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
টপাল্ = চিঠির ডাক ।
বহিন বাই = ইন্দিরা দেবী ।
জজসাহেব = অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর , সুরেন্দ্রনাথের পিতা ।



মে ১২, ২০২০

আমরা চাষ করি আনন্দে -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমরা চাষ করি আনন্দে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 



আমরা চাষ করি আনন্দে।
মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে॥
রৌদ্র ওঠে, বৃষ্টি পড়ে, বাঁশের বনে পাতা নড়ে,
বাতাস ওঠে ভরে ভরে চষা মাটির গন্ধে॥
সবুজ প্রাণের গানের লেখা রেখায় রেখায় দেয় রে দেখা,
মাতে রে কোন্‌ তরুণ কবি নৃত্যদোদুল ছন্দে।
ধানের শিষে পুলক ছোটে-- সকল ধরা হেসে ওঠে
অঘ্রানেরই সোনার রোদে, পূর্ণিমারই চন্দ্রে॥








মে ১২, ২০২০

পৃথিবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


পৃথিবী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



আজ আমার প্রণতি গ্রহন করো, পৃথিবী,
শেষ নমস্কারে অবনত দিনাবসানের বেদিতলে।।
মহাবীর্যবতী তুমি বীরভোগ্যা,
বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে,
মিশ্রিত তোমার প্রকৃতি পুরুষে নারীতে,
মানুষের জীবন দোলায়িত কর তুমি দু:সহ দ্বন্দ্বে।
ডান হাতে পূর্ণ কর সুধা,
বাম হাতে চুর্ণ কর পাত্র,
তোমার লীলাক্ষেত্র মুখরিত কর অট্টবিদ্রূপে;
দু:সাধ্য কর বীরের জীবনকে মহত্ জীবনে যার অধিকার।
শ্রেয়কে কর দুরমূল্য, কৃপা কর না কৃপাপাত্রকে।
তোমার গাছে গাছে প্রচ্ছন্ন রেখেছো প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম,
ফলে শস্যে তার জয়মাল্য হয় সার্থক।
জলে স্থলে তোমার ক্ষমাহীন রণরঙ্গভূমি-
সেখানে মৃত্যুর মুখে ঘোষিত হয় বিজয়ী প্রাণের জয়বার্তা।
তোমার নির্দয়তার ভিত্তিতে উঠেছে সভ্যতার জয়তোরণ
ত্রুটি ঘটলে তার পূর্ণ মূল্য শোধ হয় বিনাশে।।
তোমার ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের ছিল দুর্জয়-
সে পুরুষ, সে বর্বর, সে মূঢ়।
তার অঙ্গুলি ছিল স্থুল, কলাকৌশলবর্জিত;
গদা-হাতে মুষল-হাতে লন্ডভন্ড করেছে সে সমুদ্র পর্বত;
অগ্নিতে বাষ্পেতে দু:স্বপ্ন ঘুলিয়ে তুলেছে আকাশে।
জড়রাজত্বে সে ছিল একাধিপতি,
প্রাণের ‘পরে ছিল তার অন্ধ ঈর্ষা।।
দেবতা এলেন পরযুগে, মন্ত্র পড়লেন দানবদমনের-
জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত;
জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।
উষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখরচূড়ায়,
পশ্চিমসাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তিঘট।।
নম্র হল শিকলে-বাঁধা দানব,
তবু সেই আদিম বর্বর আঁকড়ে রইল তোমার ইতিহাস।
ব্যবস্থার মধ্যে সে হঠাৎ আনে বিশৃঙ্খলতা-
তোমার স্বভাবের কালো গর্ত থেকে
হঠাৎ বেরিয়ে আসে এঁকেবেঁকে!
তোমার নাড়ীতে লেগে আছে তার পাগলামি।
দেবতার মন্ত্র উঠেছে আকাশে বাতাসে অরণ্যে
দিনে রাত্রে উদাত্ত অনুদাত্ত মন্দ্রস্বরে।
তবু তোমার বক্ষের পাতাল থেকে আধপোষা নাগদানব
ক্ষণে ক্ষণে উঠেছে ফণা তুলে-
তার তাড়নায় তোমার আপন জীবকে করেছ আঘাত,
ছারখার করছ আপন সৃষ্টিকে।।
শুভে-অশুভে স্থাপিত তোমার পাদপীঠে
তোমার প্রচন্ড সুন্দর মহিমার উদ্দেশে
আজ রেখে যাব আমার ক্ষতচিহ্নলাঞ্জিত জীবনের প্রণতি।
বিরাট প্রাণের, বিরাট মৃত্যুর, গুপ্তসঞ্চার তোমার যে মাটির তলায়
তাকে আজ স্পর্শ করি- উপলব্ধি করি সর্বদেহে মনে।
অগণিত যুগযুগান্তের অসংখ্য মানুষের লুপ্তদেহ পুঞ্জিত তার ধুলায়।
আমিও রেখে যাব কয়-মুষ্টি ধূলি, আমার সমস্ত সুখদু:খের শেষ পরিণাম-
রেখে যাব এই নামগ্রাসী আকারগ্রাসী সকল-পরিচয়-গ্রাসী
নি:শব্দ ধূলিরাশির মধ্যে।।
অচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী,
গিরিশৃঙ্গমালার মহৎ মৌনে ধ্যাননিমগ্না পৃথিবী,
নীলাম্বুরাশির অতন্দ্র তরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী,
অন্নপূর্ণা তুমি সুন্দরী, অন্নরিক্তাতুমি ভীষণা।
একদিকে আপক্বধান্যভারনম্র তোমার শস্যত্রে-
সেখানে প্রসন্ন প্রভাতসূর্য প্রতিদিন মুছে নেয় শিশিরবিন্দু
কিরণ-উত্তরীয় বুলিয়ে দিয়ে;
অস্তগামী সূর্য শ্যামশস্যহিল্লোলে রেখে যায় অকথিত এই বাণী
”আমি আনন্দিত”।
অন্যদিকে তোমার জলহীন ফলহীন আতঙ্কপান্ডুর মরুক্ষেত্র
পরিকীর্ণ পশুকঙ্কালের মধ্যে মরীচিকার প্রেতনৃত্য।
বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুত্চঞ্চুবিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল
কালো শ্যেনপাখির মতো তোমার ঝড়-
সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ;
তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু করে
হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে;
হাওয়ার মুখে ছুটল ভাঙা কুঁড়ের চাল
শিকল-ছেঁড়া কয়েদি-ডাকাতের মতো।
আবার ফাল্গুনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিণে হাওয়া
ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহমিলনের স্বগতপ্রলাপ আম্রমুকুলের গন্ধে;
চাঁদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে স্বর্গীয় মদের ফেনা;
বনের মর্মরধ্বনি বাতাসের স্পর্ধায় ধৈর্য হারিয়েছে
অকস্মাৎ কল্লোলোচ্ছ্বাসে।।
স্নিগ্ধ তুমি, হিংস্র তুমি, পুরাতনী তুমি নিত্যনবীনা,
অনাদি সৃষ্টির যজ্ঞহুতাগ্নি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে
সংখ্যাগণনার-অতীত প্রত্যুষে;
তোমার চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে এসেছে
শত শত ভাঙা ইতিহাসের অর্থলুপ্ত অবশেষ;
বিনা বেদনায় বিছিয়ে এসেছে তোমার বর্জিত সৃষ্টি
অগণ্য বিস্মৃতির স্তরে স্তরে।।
জীবপালিনী, আমাদের পুষেছ
তোমার খন্ডকালের ছোট ছোট পিঞ্জরে,
তারই মধ্যে সব খেলার সীমা, সব কীর্তির অবসান।।
আজ আমি কোন মোহ নিয়ে আসি নি তোমার সম্মুখে;
এতদিন যে দিনরাত্রির মালা গেঁথেছি বসে বসে
তার জন্য অমরতার দাবি করব না তোমার দ্বারে।
তোমার অযুত নিযুত বৎসর সূর্যপ্রদক্ষিণের পথে
যে বিপুল নিমেষগুলি উম্মীলিত নিমীলিতহতে থাকে
তারই এক ক্ষুদ্র অংশে কোন-একটি আসনের
সত্যমুল্য যদি দিয়ে থাকি,
জীবনের কোন-একটি ফলবান্ খন্ডকে
যদি জয় করে থাকি পরম দু:খে
তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোঁটার একটি তিলক আমার কপালে;
সে চিহ্ন যাবে মিলিয়ে
যে রাত্রে সকল চিহ্ন পরম অচিনের মধ্যে যায় মিশে।।
হে উদাসীন পৃথিবী,
আমাকে সম্পূর্ণ ভোলবার আগে
তোমার নির্মম পদপ্রান্তে
আজ রেখে যাই আমার প্রণতি।।